বাংলাদেশে সহিংসতা বন্ধে শান্তির আবেদন জামাআতে ইসলামী হিন্দের, শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান সাইয়েদ সাদাতুল্লাহ হোসায়েনির

মীযান ডেস্ক: বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি সাইয়েদ সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনি। বাংলাদেশে সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে সদর্থক পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, যা চরম উদ্বেগজনক। তাঁর কথায়, বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিরতা ও অচলাবস্থার জন্য দায়ী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নমূলক কঠোর নীতি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচন কার্যত প্রহসনে পরিণত হয় বলে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল। যার প্রতিবাদে বিরোধী শিবির একযোগে নির্বাচন বয়কট করেছিল। পরিণতিতে সে দেশের গণতন্ত্রের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর মানুষের আস্থা একেবারে তলানিতে পৌঁছয়।

উপরন্তু, প্রতিহিংসার রাজনীতির মাধ্যমে ভিন্নমত তথা বিরোধীদের দমনে বাংলাদেশের বিদায়ী সরকারের হীন কৌশল ছিল উদ্বেগজনক বিষয়। বিশিষ্ট বিরোধী নেতাদের অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি করা হয়, যা গণতান্ত্রিক পরিসরকে গলাটিপে হত্যা করার শামিল। আর এই ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে। আমীরে জামাআত সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনি এও বলেন, প্রতিবাদী ছাত্রদের প্রতি হাসিনা সরকারের পদক্ষেপ ছিল অতিমাত্রায় হিংসাত্মক এবং দমনমূলক। এমন কঠোরতা যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা যায়। এরপর জামাআতে ইসলামী হিন্দের তরফে তিনি বাংলাদেশে অবিলম্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সর্বসম্মতিতে জনগণের আস্থাভাজন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের লক্ষ্যে মানবিক পদক্ষেপ করতে সে দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে ন্যায়বিচার দেওয়া এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি সুনিশ্চিত করার দাবিও জানান। তাঁর মতে, যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে পথ চলা শুরু করতে হবে, যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাবিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেন সত্যিকার অর্থে জনগণের সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নতুন সরকার নির্বাচিত হয়, যা বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জামাআতে ইসলামী হিন্দের শীর্ষনেতা হোসায়েনি সাহেব উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, এই অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে সেদেশে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত ভাংচুর ও তাণ্ডব চালাচ্ছে এবং নিরীহ নাগরিকদের ওপর হামলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালাচ্ছে। আবার এমনও ইতিবাচক খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনা ও তাদের সম্পদ-সম্পত্তি রক্ষায় মুসলিমরা বিভিন্ন মন্দিরের সামনে মানববন্ধন করছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমান সে দেশের সংখ্যাগুরুদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মুসলিমরা যেন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা নেয়। পাশাপাশি ভারতের জামাআতে ইসলামীর আমীর সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনি বলেছেন, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সংখ্যালঘু ও অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠীর জান-মালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রশাসনকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই সংকটজনক অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যেন প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত না হয়, কড়া হাতে সেই পদক্ষেপ করতে আহ্বান জানান তিনি। তাঁর কথায়, বাংলাদেশের নতুন পটপরিবর্তনে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিয়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও সংহতির পরিবেশ ফেরানোকে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।সবশেষে তিনি বলেন, জামাআতে ইসলামী হিন্দ বাংলাদেশের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে সে দেশের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছে। এবং সর্বোপরি চলমান সংকটের দ্রুত সমাধানের আশা করছে, যা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি দেশটির সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: