মালদায় জামাআতের সাংবাদিক সম্মেলন, উপলক্ষ: ‘নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি’ ক্যাম্পেইন

মীযান ডেস্ক: ”নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি” – এই শিরোনামে দেশজুড়ে এক অভিনব ক্যাম্পেইন শুরু করল জামাআতে ইসলামী হিন্দ। ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা মাসব্যাপী সব রাজ্যে এই সময়োচিত প্রচারাভিযান চলবে। সেই উপলক্ষে সোমবার মালদা প্রেস কর্নারে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে জামাআতে ইসলামী হিন্দ। উপস্থিত ছিলেন জামাআতের মহিলা বিভাগের জেলা সভানেত্রী নিলুফা ইয়াসমিন, সহ-সভানেত্রী রুনা লায়লা, প্রাক্তন সভানেত্রী জয়নাব আরা খাতুন, ছাত্রী সংগঠন জিআইও-র জেলা সভানেত্রী সুরাইয়া শিরীন, জামাআতের রাজ্য বিভাগীয় সম্পাদক আনিসুর রহমান, মালদা জেলা সভাপতি মোহা. সেরাজুল ইসলাম, সম্পাদক জার্জিস আলী প্রমুখ।

জেলা সভানেত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আর নৈতিকতা তার গৌরবময় সম্পদ। নৈতিকতা বিবর্জিত স্বাধীনতা মানব সমাজকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে দেয় না। স্বাধীনতা মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকই; কিন্তু অবাধ স্বাধীনতা এইসব ক্ষেত্রগুলিতে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পশ্চিমা সভ্যতা বস্তুবাদ ও ভোগবাদকে উৎসাহিত করেছে। নীতি-নৈতিকতাকে লঘু করে ছেড়েছে। তাই মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে এবং মানুষের চেতনা ও নৈতিক জাগরণ ঘটাতে এই ধরনের সময়োচিত কর্মসূচি নিয়েছে জামাআতে ইসলামী হিন্দ।

প্রাক্তন মহিলা সভানেত্রী জয়নাব আরা খাতুন বলেন, স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর একনও প্রতি ১৬ মিনিটে একজন ধর্ষিতা হন। অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র মহিলা ডাক্তারকে বর্বরভাবে ধর্ষণের পর খুনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত দু-সপ্তাহে বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কতগুলো ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন এ দেশে গড়ে ৯০ জনেরও বেশি ধর্ষিতা হন। আইন করে এসব প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের নেপথ্য কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে বন্ধ করতে হবে। সবার আগে মদ, ড্রাগস, পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও অবাধ যৌনতা, পরকীয়া, সমকামিতা, বহুগামিতা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আনতে হবে।

জিআইও-র জেলা সভানেত্রী সুরাইয়া শিরীন বলেন, আরজি কর কাণ্ডের গত গত ২০ দিনে বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণ, ধর্ষণ করে খুন ও যৌন নির্যাতনের রোমহর্ষক ঘটনায় স্তম্ভিত সমাজের বিবেক। এসব পাশবিক ঘটনাবলী প্রমাণ করছে, আমাদের দেশে নারীদের প্রতি মানসিকতা ও আচরণে থাকতে হবে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন।

জেলা মহিলা সহ-সভানেত্রী রুনা লায়লা বলেন, পুঁজিবাদী সভ্যতা উদারনৈতিকতা, অবাধ স্বাধীনতা ও মুক্তমনার নামে মনুষ্য সমাজকে চরম বিভ্রান্তিতে ফেলছে। যার কু-প্রভাব পড়ছে শালীনতা, নৈতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক ব্যবস্থাপনা ও দাম্পত্য জীবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে। পরিবার নারীদের জন্য সুরক্ষিত দুর্গের ন্যায়। বিবাহের মাধ্যমে এই পবিত্র বন্ধন রচিত হয়। কিন্তু নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাবে বল্গাহীন স্বাধীনতার বদৌলতে এখন বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনতার প্রতি ঝোঁক-প্রবণতা বাড়ছে। যা নৈতিকতার সংকট, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় এবং সর্বোপরি মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব অভিশাপ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হল সৃষ্টিকর্তার তরফে দেওয়া ঐশী পথনির্দেশনার আলোকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিবার ও সমাজ গড়তে হবে।

জামাআতের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ সেরাজুল ইসলাম বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে, নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলার মাধ্যমেই প্রকৃত ও টেকসই স্বাধীনতা অর্জন করা যায়। জামাআতে ইসলামী হিন্দের ”নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি” শিরোনামে মাসব্যাপী চলমান ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম বা অঞ্চল নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করা।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: