মীযান ডেস্ক: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট জি শিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক হয়ে গেল। দীর্ঘ ৬ বছর পর যুযুধান দুই পরাশক্তি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বৈঠক হল বুধবার। এই বৈঠকে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বৈঠক শেষে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার ধারণা যেগুলো খুবই গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।’
যদিও বৈঠকের আগে চীনা প্রেসিডেন্ট শিনপিং স্বীকার করেন, ‘মার্কিন-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কখনোই মসৃণ ছিল না। তবে তাই বলে একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কোনো অপশন হতে পারে না।’ ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক থেকে উঠে এসেছে:
১। জলবায়ু ইস্যুতে ঐকমত্য: বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী এই দুই দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। মিথেন নির্গমন কমানোর ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মিথেন হলো এক ধরনের শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস। দেশ দুটি ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে তিনগুণ বাড়ানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে।
২। ফেন্টানাইল পাচার রোধ: দু’পক্ষই বলেছে, তারা মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একে অপরকে সাহায্য করবে। চীন ও আমেরিকা অবৈধ ফেন্টানাইলের জোয়ার রোধে রাসায়নিক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এই উপাদানটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের ফলে মানুষের মৃত্যু হার অনেক বেড়েছে। গত বছর প্রায় ৭৫ হাজার মার্কিনির মৃত্যুর কারণ ছিল এই শক্তিশালী সিনথেটিক ওপিওড বা কৃত্রিম ওপিওড। এটা এমন পদার্থ, যা পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত হয় এবং মস্তিষ্কের ওই অংশে প্রভাব ফেলে যেমনটা প্রাকৃতিক ওপিওড যেমন, মরফিন, কোডাইন করে থাকে। এগুলো মূলত যন্ত্রণানাশক বা ব্যথা উপশমে কাজ করে। চীনা কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র এই ওষুধই উৎপাদন করে না; বরং ওষুধগুলো তৈরি করার জন্য যেসব রাসায়নিক উপাদানের প্রয়োজন হয় সেগুলোর উৎসও এই কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে চীনের দাবি, মার্কিন মুলুকে যে ওপিওড মহামারী দেখা দিয়েছে, এর পেছনে আমেরিকাই দায়ী।
৩। সামরিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন: দু’দেশ একে অপরের সাথে সামরিক যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা মার্কিনিদের প্রত্যাশার তালিকার উপরের দিকে ছিল।
গত বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করার পর চীন আমেরিকার সাথে সামরিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে এক সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন উত্তর আমেরিকার আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। আমেরিকা সেগুলো গুলি করে আটলান্টিক মহাসাগরে নামিয়ে নেয়। তারপর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরো অবনতি হয়।
সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষাবিষয়ক সচিব মিক মুলার বলেন, ‘স্নায়ু যুদ্ধের সময় আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সবসময় পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর সাথে সামরিক যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। যাতে পারমাণবিক শক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধের কারণ হতে পারে এমন যেকোনো দুর্ঘটনা বা ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়। এটি এখন চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও এটা হওয়া দরকার।’
৪। আলোচনা চলবে: দু’দেশের চুক্তির বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকলেও, এটি নিছক একটি বৈঠক ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই প্রেসিডেন্ট পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে পারাই এক বড় কূটনৈতিক সাফল্য। বৈঠক শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাইডেন জিনপিংকে বলেন, ‘আমি আমাদের কথার মূল্য দেই। কারণ আমি মনে করি আমরা রাষ্ট্রনেতা হিসেবে পরস্পরকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, কোনো ভুল ধারণা বা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়াই।’
এরপর জিনপিং বলেন, সঙ্ঘাত ও সংঘর্ষ উভয়পক্ষের জন্যই অসহনীয় পরিণতি বয়ে আনে। দু’দেশ এখনো অনেক বিষয়ে দুই মেরুতে রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে অসম্মতি জানাতে সম্মত হওয়াও একটি শুরু। তবে কিছু পর্যবেক্ষক এ ব্যাপারে অত্যধিক আশাবাদী না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন। অন্যদিকে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে তাইওয়ান নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাইডেনকে জিনপিং বলেন, যাতে তাইওয়ানকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ করা হয়। তবে এই মুহূর্তে সবথেকে জ্বলন্ত ইস্যু গাজা যুদ্ধ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও কথা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।