তাহমিনা আক্তার চলছে রজব মাস। পরম পুণ্যের মাস রমযান নিকটবর্তী হচ্ছে। তারই অগ্রিম আগমনী বার্তা দিচ্ছে। হিজরি ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাস রজব, তারপর শাবান, এরপরই রমযান। মাঝে শুধু একটি মাস শাবান। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস হল রমযান। এই মাস শুরু হলেই পরহেজগার মুসলমানের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে না, তারাও এই মাসে ওয়াক্তিয়া নামায পড়েন এবং অতিরিক্ত তারাবীহর নামাযও আদায় করেন। অর্থাৎ বেশিরভাগ মুসলমান রমযান মাসে প্র্যাকটিসিং মুসলিম হয়ে যায়। আল্লাহ যেন তাদেরকে সারা বছর নামায আদায়ের তাওফীক দেন। তারা যেন রমযান ছাড়া বাকি মাসগুলোতে উদাসীন না থাকেন। রমযান থেকে আমরা তো অল্পই দূরে আছি। আমরা কি পারি না প্রস্তুতিটুকু এখন থেকেই শুরু করতে? আমাদের দেশে বহু সংখ্যক মুসলিম এখনও কুরআন পড়তে জানে না। যারা পড়তে জানে, তারা আবার সহীহভাবে পড়তে জানে না। আবার যারা সহীহভাবে পড়তে জানে, তারা সচরাচর তরজমা, তাফসীর সহ কুরআন পড়েন না। রমযান আসার জন্য অনেকেই অপেক্ষায় থাকে এই মাসে কুরআন শিখবে বলে। কিন্তু এই প্রস্তুতি তো রমযানের আগেই নিতে পারি। আর যারা কুরআন পড়তে জানি, তারা অল্প অল্প করে হলেও নিয়মিত তরজমা ও তাফসীর সহকারে কুরআন অধ্যয়নে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদেরকে নিজের ভাষায় জীবনবিধান আল কুরআনকে বোঝার তাওফীক দান করুন। রজব মাসের তাৎপর্য: হিজরি সনের অন্যান্য মাসের মধ্যে রজব মাস অতি সম্মানিত ও মর্যাদাবান এবং তাৎপর্যবহ ও বরকতময়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: ‘নিশ্চয়ই আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য নিষিদ্ধ) সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।’ (সূরা আত তাওবাহ: ৩৬)। নবীজি (সা.) রমযান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোযা রাখতেন শাবান মাসে, তারপর রজব মাসে। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর আমল দেখে তা বুঝতে পারতাম। অধিক পরিমাণে কুরআন অধ্যয়ন করা রজব মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কুরআন তিলাওয়াত শেখা ও শুদ্ধ করা, নামাযের জন্য প্রয়োজনীয় সূরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদ ভালভাবে জানা খুবই জরুরি, যাতে রমযানের আমল সঠিকভাবে করা যায়। ইমাম ইবনু রাজাব (রহ.) বলেছেন, ‘রজব মাস হচ্ছে কল্যাণ ও বরকতময় মাসগুলোর চাবিকাঠি।’ ইমাম আবু বাকর আল বালখী (রহ.) বলেন, ‘রজব হচ্ছে বীজ বপনের মাস, শাবান মাস হচ্ছে সেই বীজে পানি সিঞ্চনের মাস, আর রমযান হচ্ছে ফসল তোলার মাস।’ (লাতাইফুল মাআরিফ: পৃ.-২১৮)। এই মাস হল ১) গুনাহ কমানোর প্রয়াস, ২) সময়ের অপচয় রোধ, ৩) বেশি বেশি নেক আমলের প্রয়াস, ৪) সাপ্তাহিক দুটি ও আইয়্যামে বিজের সিয়ামগুলো পালনের মধ্যমে রমযানের অগ্রিম প্রস্তুতি গ্রহণ, ৫) রমযানের ব্যাপারে পরিকল্পনা করা, বিশেষ করে শেষ দশকের লাইলাতুল ক্কদরের ব্যাপারে, ৬) বেশি বেশি তিলাওয়াতের মাধ্যমে রমযানে অধিক পরিমাণে কুরআন অধ্যয়নের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, ৭) কয়েক রাকাত করে তাহাজ্জুদ আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে রমযানের দীর্ঘ কিয়ামের জন্য প্রস্তুত করে নেওয়া, ৮) বেশি বেশি জিকর বা আল্লাহর স্মরণ করা, ৯) রমযানের প্রয়োজনীয় মাসায়েল জেনে নেওয়া, ১০) আল্লাহ তাআলার কাছেই সময়ের বরকত চাওয়া এবং রমযানকে উত্তমভাবে কাজে লাগানোর কামনা জানিয়ে দোয়া করা। ১১) দান-সাদকা করা, পরিমাণে অল্প হলেও এবং ১২) নিজেকে সংযত ও সংশোধন করা। ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদেরকে রমযান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ী: ৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪৬)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রজব মাসের তাৎপর্য জেনে এর ওপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।