সেনাবাহিনীর হাতে যাচ্ছে মণিপুর, গোটা রাজ্যকেই ‘অশান্ত’ অঞ্চল ঘোষণা, আফস্পার মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

মীযান ডেস্ক: কোনও ভাবেই শান্ত হচ্ছে না অগ্নিগর্ভ মণিপুর। বিশেষ করে দুই পড়ুয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট, মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন ও রাষ্ট্রসংঘের চাপে পড়ে অবশেষে ৫ মাস পর ঘুম ভাঙল সরকারের। নতুন করে অশান্তি ও হাঙ্গামার আশঙ্কায় বুধ ও শুক্রবার রাজ্যের স্কুলগুলিতে ছুটি দেওয়া হয়েছে। নবী দিবস উপলক্ষে শনিবার ছুটি আছে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত প্রায় দুশা মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। গৃহহীন অসংখ্য মানুষ। মৃত্যুমিছিল, গণধর্ষণ, বাড়ি ও দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা সত্ত্বেও ঘুম ভাঙেনি ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারের। নিন্দার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে রাষ্ট্রসংঘ পর্যন্ত। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতে তাই সেনার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অশান্ত মণিপুরকে। আগামী ছ’মাসের জন্য কার্যত গোটা রাজ্যকে ‘ডিস্টার্ব এরিয়া’ তথা ‘উপদ্রুত এলাকা’ ঘোষণা করল কেন্দ্র। একইসঙ্গে কার্যকর করা হচ্ছে বিতর্কিত আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট বা আফস্পা। তবে দু’টি সিদ্ধান্তই বলবৎ হবে রাজধানী ইম্ফল সহ উপত্যকা এলাকার ১৯টি থানাকে বাদ রেখে। অর্থাৎ মূলত পাহাড়ি এলাকায়, যেখানে মূলত কুকি ও নাগা সহ অন্যান্য উপজাতির বাস। ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে এই সিদ্ধান্ত। এদিন এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দপ্তর।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে আর ঝুঁকি নিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। তাই বুধবার গোটা রাজ্যকেই অশান্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা করল মণিপুর সরকার। পাশাপাশি রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা-র মেয়াদ বাড়ল আরও ৬ মাস। মণিপুরে অবশ্য এটি মূলত ‘কালা কানুন’ হিসেবে পরিচিত। দেশে প্রথম আফস্পা কার্যকর হয়েছিল মণিপুর ও অসমেই। এই কালাকানুন প্রত্যাহারের দাবিতে দীর্ঘ দেড় দশক অনশন করেছিলেন মণিপুরের ‘আয়রন লেডি’ ইরম শর্মিলা চানু।

এদিকে সমতল অঞ্চলের ১৯ থানা এলাকাকে নতুন ঘোষণার বাইরে রাখা হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিসের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে সমগ্র রাজ্যকে অশান্ত এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘দুই ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ইম্ফলে প্রবল বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে নামানো হয় বিশেষ বাহিনী। ছাত্র-পুলিস সংঘর্ষে আহত হন ৪৬ জন। যদিও আগে থেকেই ইম্ফলের সমতল এলাকায় সিআরপিএফ ও RAF মোতায়েন করা হয়।

এখন পর্যন্ত মণিপুরে কুকি ও মেইতেইদের হিংসায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় দুশো জনের। রাজ্যের ৫৩ শতাংশ মেইতেই (প্রধানত হিন্দু) বসবাস করেন সমতল এলাকায়। ৪০ শতাংশ কুকি ও নাগা-রা (মূলত খ্রিস্টান) থাকেন পার্বত্য এলাকায়। সম্প্রতি বিজেপি শাসিত মণিপুর সরকার মেইতেইদের এসটি বা তপশিলী উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলে উত্তেজনা ছড়ায় গত ৩ মে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: