মণিপুরের ভিডিয়ো পুলিশকে না দিয়ে ছড়ানো হল কেন: অনাস্থা বিতর্কে লোকসভায় অমিত শাহ

মীযান ডেস্ক: মণিপুরে দুই মহিলাকে ধর্ষণ করার পর নগ্ন করে তাদেরকে প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁটানোর ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধী শিবির। তারই জবাব দিতে গিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রশ্ন তোলেন, ওই বিতর্কিত ভিডিয়ো পুলিশকে না দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হল কেন? অর্থাৎ মণিপুর ইস্যুতে অশ্লীল ভিডিয়ো কেন অনলাইনে ছড়ানো হল – এটাই শাহের গুসসার কারণ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশকে কেন ওই ভিডিয়ো দেওয়া হয়নি? কিন্তু তথ্য বলছে, মাস তিনেক আগে যখন ওই নারকীয় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তখনই বিষয়টি জাতীয় মহিলা কমিশনের গোচরে এসেছিল। কিন্তু কমিশন সে বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। বিরোধী পালটা প্রশ্ন এটাই।
তিন মাস ধরে মণিপুরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি চলছে। অথচ ব্যর্থতার দায়ে এখনও সেখানকার বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহকে কেন অপসারণ করা হয়নি? এদিন অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিয়ে একের পর এক বিরোধী দলের সাংসদ এ প্রশ্ন করলে অমিত শাহ জবাবে বলেন, ‘‘কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তখন বদলানো হয়, যখন তিনি সহযোগিতা করেন না।’’ অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ডাবল ইঞ্জিন মণিপুর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন, তাই তাঁকে সরানোর কোনও হেতু নেই। মণিপুরে কতজনের মৃত্যু হয়েছে? শাহ জানালেন, ‘‘মণিপুরে হিংসায় এ পর্যন্ত ১৫২ জন মারা গিয়েছেন।’’
বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ করে শাহ বলেন, ‘‘গত ৯ বছরে মোদীজী ৫০ বার উত্তর-পূর্ব ভারতে গিয়েছেন, এঁরা মণিপুর তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য কী করেছে? তিনি এও বলেন, মণিপুরের হিংসা খুব লজ্জার, কিন্তু মণিপুর নিয়ে রাজনীতি করাটা আরও লজ্জার বিষয়।’’ শাহের মতে, ‘‘এই অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হবে, মোদী সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে। কারণ মোদী সরকারের উপর আপনাদের অনাস্থা থাকতে পারে, কিন্তু জনতার আস্থা আছে।’’
এরপর মোদির গুণগান করে শাহ বলেন, বিশ্বের সামনে ভারতের সম্মান বৃদ্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র  মোদী। ডজন খানেক দেশ মোদিকে সম্মানিত করেছে। যা ভারতের গর্ব। বিরোধীরা সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু করেনি। তার কারণ ওঁদের কখনওই কাজ করার উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। সেই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ওরা দুর্নীতি করেছে। আর মোদী সরকার এসে দেশ থেকে দারিদ্র ও দুর্নীতি দূর করার কাজ করছেন। তাঁর কথায়, বিজেপি নীতির জন্য রাজনীতি করে। আর বিরোধীরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ছুটি না নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ ঘণ্টাই কাজ করেন।’’
কাশ্মীরের বর্ষীয়ান নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কখনও একটি নির্দিষ্ট রঙের প্রতিনিধি হতে পারেন না। তিনি গোটা দেশের সমস্ত রঙের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেটা উনি ভুললে চলবে না। কাশ্মীর পণ্ডিতদের উপর অত্যাচারের কথা বলছেন ওঁরা। কিন্তু গত দশ বছরে কতজন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ফেরত এনেছে?’’ ফারুক আরও বলেন, ‘‘হিংসা ছেড়ে প্রেমের কথা বলুন। জি-২০ সম্মেলনের অতিথিদের কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরে শান্তি এনেছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন, ওই অতিথিদের কাশ্মীরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা গুলমার্গে নিয়ে যেতে পারবে না মোদী সরকার? তার কারণ কেন্দ্র যতই শান্তির কথা বলুক,  আসলে এখনও শান্ত হয়নি কাশ্মীর।’’
এদিকে মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের কথা সরকার শুনতে রাজি নয়— এই অভিযোগ এনে প্রতিবাদে রাজ্যসভা থেকে এদিন ওয়াকআউট করল কংগ্রেস। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মণিপুর নিয়ে বিশদ আলোচনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসতে রাজি নন। সরকার বিরোধীদের কথা শুনতে রাজি নয়। তাই প্রতিবাদ হিসাবে আমরা রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করছি।’’
অন্যদিকে চড়া সুরে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তামিলনাডুর ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি বলেন, মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো এবং তাঁদের সামনেই পরিবারের সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। মণিপুরে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার চলছে। কিন্তু সেখানে মহিলাদের বিরুদ্ধে তবে কেন এমন অত্যাচার চলছে। কেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আজও নির্যাতিতদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি? কেন প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে বিশ্ব সফর করে বেড়াচ্ছেন অথচ মণিপুরে যাননি। কেন সে রাজ্যের পুলিশ ওই ঘটনার নীরব দর্শক হয়ে ছিল? কেন পুলিশ ওই মহিলাদের উন্মত্ত জনতার হাতে তুলে দিয়েছিল? মনে রাখতে হবে, মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় যাঁরা নীরব দর্শক হয়েছিলেন, তাঁদেরও শাস্তি পেতে হয়েছিল। কাল ১০ আগস্ট অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন সরকারের কাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিরোধীদের মহাজোট ইন্ডিয়ার মুখ রাহুল গান্ধী। রাত পোহালে কী হবে, সে দিকেই এখন তাকিয়ে দেশবাসী।

Share :

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: