মীযান ডেস্ক: নতুন সংসদ ভবনে ‘সংবিধান হল’-এর গ্যালারিতে রামায়ণ-মহাভারতকেই ‘ইতিহাস’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘রামায়ণ ও মহাভারত হল মহাকাব্য, যা আমাদের ইতিহাস।’ রামমন্দির নিয়ে বিতর্কের সময়ে অভিযোগ উঠেছিল, মানুষের ধর্মীয় আবেগকে হাতিয়ার করে রামায়ণকে ইতিহাস হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে বিজেপি। ভারত কেন ‘গণতন্ত্রের জননী’, তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতেই এসেছে রামায়ণ-মহাভারতের কথা। বলা হয়েছে, দুই মহাকাব্যেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণের বিবিধ উদাহরণ রয়েছে। রামায়ণে রামের রাজ্যাভিষেক, মহাভারতে কুরু ও পুরুর রাজ্যাভিষেকের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি জড়িত ছিল। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রাক্তন সাংসদ নীলোৎপল বসু বলেন,‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলছি এরা পুরাণকে ইতিহাস এবং দর্শনকে ধর্মতত্ত্ব বলে চালাচ্ছে। নতুন সংসদ ভবনের স্থপতিদের ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। যে ভারতীয় সত্তা স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে তার বদলে এরা হিন্দুত্ববাদী সত্তা চাপিয়ে দিতে চাইছে।’’ সংবিধান গ্যালারিতে জায়গা পেয়েছে কৌটিল্য ও তাঁর শাসনের নীতি, সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর জনপদের শাসন ব্যবস্থা, বৌদ্ধ ও জনসঙ্ঘ, অশোকের শাসনরীতি। কিন্তু মোগল শাসনের ছিঁটেফোটাও স্থান পায়নি সেখানে। এসব দেখে বিরোধী সাংসদরা প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী নিজে কি ভারতীয় ঐতিহ্য, প্রথা কিংবা পরম্পরা মেনে শাসন করেন? তা হলে তাঁর জমানায় সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের অভিযোগ বারে বারে ওঠে কেন? নতুন সংসদ ভবনে আগের মতো সেন্ট্রাল হল নেই। তার বদলে ভবনের মাঝখানে রয়েছে সংবিধান হল বা কনস্টিটিউশন হল। সেখানে অবশ্য অধিবেশনের জায়গা নেই। তার বদলে ভবনের সুউচ্চ ছাদ থেকে ঝুলছে বিরাট মাপের ফুকোর পেন্ডুলাম। কলকাতার ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামের তৈরি এই যন্ত্রে ফরাসি পদার্থবিদ ফুকোর দেখানো পথে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ফুটে উঠছে। সংবিধান হলে কেন ফুকোর পেন্ডুলাম? সংসদের কর্মীরা বলছেন, সংবিধানের ৫১-এ অনুচ্ছেদে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার মৌলিক দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, মোদী যে গণেশের মাথা প্লাস্টিক সার্জারি করে বসানো হয়েছিল, জেনেটিক গবেষণার ফলে কর্ণের জন্ম হয়েছিল ইত্যাদি দাবি করেন, তাতে কি বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হয়? মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বারবারই সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার কথা বলেন। তাঁদের দাবি, পুরাণে বর্ণিত সরস্বতী নদীর বাস্তবে অস্তিত্ব ছিল। নতুন সংসদ ভবনের স্থাপত্য গ্যালারিতেও গুজরাতের ধোলাবিরাকে সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার নিদর্শন বলে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাক্তন আমলা ও তৃণমূলের সাংসদ জহর সরকার বলেন, ‘‘সরস্বতীর অস্তিত্ব প্রমাণে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যদিও এখনও তার প্রমাণ মেলেনি।’’