নাইন ইলেভেন: দুনিয়া কাঁপানো একদিন, ২২ বছর কেটে গেলেও শনাক্ত হয়নি ১১০৩ জনের দেহ

মীযান ডেস্ক:  আমেরিকায় ৯/১১ হামলার ২২তম বছর আজ সোমবার। বিমান ছিনতাই করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল। অভিযোগের তীর ছিল আল কায়দা-র দিকে। সেদিন মুহূর্তের ব্যবধানে দু-দুটি বিমান আছড়ে পড়েছিল আকাশচুম্বি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। এছাড়াও আরেকটি আত্মঘাতী বিমান হানা হয়েছিল আমেরিকার অহংকারের প্রতীক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দফতর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে এবং শেষতম বিমান ভেঙে পড়েছিল পেনসিলভেনিয়ার শ্যাঙ্কসভিলের মাঠে। এভাবেই সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে সেদিন মোট ৪টি বিমান ছিনতাই করে হামলা চালানো হয়েছিল আমেরিকার ভিভিআইপি জোনে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল এরকম হাই সিকিওরিটি জোনে যেখানে মাছি কিংবা পিঁপড়ে পর্যন্ত গলতে পারে না, সেইসব জায়গায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্ঠনী ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রধারী রক্ষীদের চাখে ধুলো দিয়ে কীভাবে ৪টে বিমান হামলা হল। ষড়যন্ত্রের এমন অনেক রকম অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ২২ পর কেটে গেলেও সেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

সেদিন হামলার পর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। সুউচ্চ ভবন দুটিতে বহু মানুষ আটকা পড়েন। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বিলাসবহুল অট্টালিকাটি। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা করে। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই ভবন দুটি ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে। মৃত্যু হয় বহু মানুষের। অন্যদিকে তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের আঘাত হানে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। এরপর, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার মাঠে।

এই ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারান ২৯৭৭ জন নিরীহ মানুষ। এদের মধ্যে ১৬৫০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এখনও ১১০৩ জনের পরিচয় মেলেনি। নিহতদের মধ্যে দুই জনের সম্প্রতি পরিচয় জানা গেছে। তাদের দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই ২২ বছর পর এটা সম্ভব হয়েছে। তবে পরিবারের অনুরোধে নিহত পুরুষ ও নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে বলে জানান সেখানকার মেয়র এরিক অ্যাডামস।

উল্লেখ্য, ৯/১১-র হামলার পর সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে হত্যা করা হয় আল কায়দা সুপ্রিমো ওসামা বিন লাদেনকে। ২০১১ সালের ২ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে মার্কিন নেভিসিল বাহিনীর সাঁড়াশি হামলায় নিহত হয় ওসামা।

প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর নিহতদের স্মরণে আমেরিকার গ্রাউন্ড জিরোতে ৯/১১ স্মৃতিসৌধ ও মিউজিয়ামে বার্ষিক শোকসভার আয়োজন করা হয়। যদিও এবার এই দিনটিতে ভিয়েতনামে থাকায় গ্রাউন্ড জিরোতে হাজদির থাকতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

৯/১১-র পরের ঘটনা আরও ভয়াবহ। এক ওসামা বিন লাদেনের জন্য প্রায় ডজন খানেক মুসলিম দেশের ওপর কথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় আমেরিকা তথা ন্যাটো। ইরাক, আফগানিস্তান সহ এইসব দেশগুলোতে কত কোটি নিরীহ মানুষকে এই যুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনও পরিসংখ্যান নেই। শুধু গণহত্যাই নয়, ওইসব দেশগুলোকে বিধবা ও ইয়াতিমের দেশে পরিণত করা হয় এবং ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। দু-দশক ধরে চালানো সেই যুদ্ধের দুই প্রধান সেনাপতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার পরে অবশ্য স্বীকার করেছিলেন, ভুল গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক ভুলের জন্য ২৯৭৭ জনের প্রাণের বদলা নিতে গিয়ে একঝাঁক দেশের অগণিত নিরপরাধ মানুষের অকাল মৃত্যুর দায়ে কারও সাজা হয়নি কেন – এ প্রশ্ন আজও ঘুরছে ইথার-তরঙ্গে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: