মীযান ডেস্ক: রবিবার ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। ফলাফলে দেখা যায় ২২৩ আসনে জিতে নিরঙ্কুশ বা তার থেকেও বেশিভাবে জিতে পুনরায় সরকার গড়তে চলেছে হাসিনার আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার প্রধান বিরোধী দল খালেদা জিয়ার বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রহসনের ডামি নির্বাচন বয়কট করায় বিরোধী দল বলে কিছুই নেই। হাসিনার সঙ্গে জোট করে ২৬ আসনে লড়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি জিতেছে মাত্র ১১ আসনে। নির্দলরা জিতেছে ৬২টা আসন। সুতরাং এবারও বিরোধী দল বলে পার্লামেন্টে কিছু থাকছে না।
সুতরাং কে হবেন বিরোধী দলনেতা? সে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভোট সোমবার ঢাকার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধী দলের কে কে প্রার্থী হবেন, কীভাবে চলবে বিরোধীরা, সে কি আমি ঠিক করে দেব? আর করে দিলেও সেই দল কি বিরোধী দলের গ্রহণযোগ্যতা পাবে? গণতন্ত্রে এটা কি উচিত?” এর পরই হাসিনা বলেন, “এখন যারা বিরোধী দল, তারা সন্ত্রাসীর দল। ট্রেন-বাস পুড়িয়ে মানুষ মারে। ভোটে লড়ার যোগ্যতা বা সাহস কিছুই এদের নেই।”
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্যিকার অর্থে বিরোধী দল না থাকায় হাসিনা সরকার এই নির্বাচনকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক দেখাতে ভোটে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বাড়াতে সচেষ্ট ছিল। তবে এসব দলের অধিকাংশেরই কোনও জনসমর্থন নেই। অধিকাংশ দলেরই সংসদে কখনও প্রতিনিধিত্বই ছিল না। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ২৩টির কোনও প্রার্থীই জিততে পারেননি।
১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ১৪০ এবং আওয়ামি লিগ ৮৮টি পেয়েছিল। সেই ভোটের পর জামায়াতে ইসলামির সমর্থনে বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামি লিগ ১৪৬ আসনে জিতে প্রথমবার শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। ২০০৮ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামি লিগ ২৩০ আসন পেয়ে সরকার গড়ে। ২০১৮ সালে আওয়ামি লিগ ২৫৮ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পায়। বিএনপি পায় মাত্র ৬টি আসন।
এবার নির্বাচনে আওয়ামি লিগ ও এরশাদের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল সবচেয়ে বেশি। এর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী ছিল নতুন নথিভুক্ত হওয়া রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির। চতুর্থ সর্বোচ্চ ১২২ জন প্রার্থী ছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯, জাসদের ৬৬, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ৫৬ জন করে প্রার্থী ভোটে লড়াই করেছেন। কিন্তু এই ছোট দলগুলির কেউই জিততে পারেননি।
সব দল মিলিয়ে এবার দেড় হাজারেরও বেশি প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। গতবার সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল ৯টি দলের। কিন্তু এবার তো সবেধন নীলমনি এরশাদের জাতীয় পার্টি। হাসিনার জোটসঙ্গী এই দল পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। আর নির্দলরা পেয়েছে ৬২। তাহলে বিরোধী দল বা বিরোধী দলনেতা কে হবেন? এটাই এখন হাসিনাকে সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটাই এখন লক্ষ ডলারের প্রশ্ন।