মীযান ডেস্ক: নতুন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনেই এক মুসলিম সাংসদকে জাত-ধর্ম তুলে মারাত্মক কটূক্তি করলেন বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার লোকসভার বক্তব্যে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে এই বিজেপি সাংসদকে।
অতি সম্প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক ভাষণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক ও ভর্ৎসনা করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু তার পরেও ভাষা প্রয়োগে সংযত হতে পারছেন না সাংসদদের একাংশ। বিশেষ করে গেরুয়া শিবিরের নেতারা। সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধূরির চরম অবমাননাকর কটূক্তি ফের সেই বিতর্কই উসকে দিল। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত বহুজন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ কুনোয়ার দানিশ আলীকে সরাসরি ধর্ম তুলে আক্রমণ করেন রমেশ বিধুরি। চন্দ্রায়নের সাফল্য নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন দানিশ, সেই সময়েই তাঁকে অসংসদীয় ভাষায় জাত-ধর্ম তুলে আক্রমণ করেন রমেশ। যা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বটে, তবে বিজেপি দল বা স্পিকার, কাউকেই এখনও পর্যন্ত ওই বক্তব্যের নিন্দা করতে শোনা যায়নি।
এর আগে বিশ্বনবী হযরত মহম্মদ (সা.)-কে নিয়ে তীব্র বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক হইচই হলে বাধ্য হয়ে নূপুর শর্মা এবং নবীন কুমারকে সাসপেন্ড করেছিল বিজেপি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায়কে মারাত্মকভাবে অপমান অবমাননা করলেও রমেশের বিরুদ্ধে কখনোই শাস্তির পথে হাঁটেনি দল। তবে রমেশকে শোকজ করেছে বিজেপি। কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাংসদ রমেশ আসলে দলের নির্ভরযোগ্য সেনা ও সম্পদ। আরএসএস-এর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাঁর। ২০১৫ সালে মহিলাদের প্রতি অপমান এবং যৌন অবমাননামূলক মন্তব্য করেন এই কীর্তিমান বিজেপি সাংসদ। ২০১৭ সালে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতীর বিরুদ্ধে একইরকম অসম্মানজনক মন্তব্য করেন। ২০১৯ সালে সৌজন্যের বাইরে গিয়ে কেজরিওয়ালকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।
সাংসদ দানিশ আলীকে এদিন ‘সন্ত্রাসী, কাটুয়া ও দালাল’ ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করেন। এসব ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে রমেশ বিধুরি যখন জাত-ধর্ম তুলে অশালীন ভাষায় কথা বলছিলেন তখন তাঁর পাশে বসে সিনিয়র বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ হাসছেন। অভিযোগ উঠেছে, অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধীর মতো নেতাকে যখন স্পিকার কঠিন সাজা দিয়েছেন, তখন রমেশকে কেন এতবড় অপরাধে ছাড় দেওয়া হবে। শুধুমাত্র খাতা থেকে তাঁর ওই বিতর্কিত ভাষণ দিতে বলেন স্পিকার ওম বিড়লা। সাসপেন্ড বা শাস্তিমূলক কিছু পদক্ষেপ করেননি তিনি।
চরমভাবে অপমানিত হয়ে এদিন পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় সাংসদ দানিশ আলীকে। তারপর এদিনই পাশে থাকার বার্তা দিতে দানিশের বাড়ি যান রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতা সাংসদ রাহুল বলেন, ”ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান খুলেছি আমরা বিরোধীরা।” উল্লেখ্য, দানিশের দলনেত্রী মায়াবতীও সেভাবে কোনও কড়া মন্তব্য করেননি।
