মীযান ডেস্ক: ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল ইউরোপের তিন দেশ। এর আগেও শতাধিক দেশ এই স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই নতুন করে স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড ইউরোপের এই তিন দেশের দেওয়া স্বীকৃতি কীরূপ প্রভাব ফেলবে – তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশ তিনটির দাবি, এই স্বীকৃতির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হল। এই সিদ্ধান্ত ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর ওপর বিশেষ করে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির ওপর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থন করার জন্য পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চলতি গত মে মাসের ১০ তারিখ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩টি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোটে দিয়েছে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের মজলুম দেশটি রাষ্ট্রসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পেতে পারে। ফিলিস্তিন ২০১২ সাল থেকেই রাষ্ট্রসংঘের অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে। কিন্তু ভোটাধিকার নেই।
তবে অনেক ইউরোপীয় দেশ এবং আমেরিকা ফিলিস্তিনকে আলাদা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তারা বলে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী একটি রাজনৈতিক সমাধানের অংশ হিসাবে তারা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তার মানে বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ। এদিকে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ এর তত্ত্বটি এসেছিল ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি আলোচনার মাধ্যমে, যেখানে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয়েই তাদের নিজস্ব সীমানা-সহ তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল।
ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ গত কয়েক মাসে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে বলছে, রাজনৈতিক মীমাংসাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা করতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আগে আসতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ফ্রান্সের জন্য নিষিদ্ধ নয়।’ ওই মাসের শুরুতে রাষ্ট্রসংঘের ভোটে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ সমর্থন করেছিল ফ্রান্স। তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়। কিন্তু তারা এটিকে তাদের কূটনৈতিক সাফল্যের একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখতে চায়। বিষয়টিকে তারা তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্য হিসেবে নয়; দেখাতে চায় তারা দয়া বা করুণা করছে ফিলিস্তিনকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল একটি প্রতীকী বিষয়। এর কূটনৈতিক গুরুত্ব আছে, কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর না পেলে শুধুমাত্র স্বীকৃতি দিয়ে বাস্তব পরিস্থিতিতে বদল আসবে না। যেমন- ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সীমানা কী হওয়া উচিত? রাজধানী কোথায় হবে? জেরুজালেম, নাকি রামাল্লাহ? যেহেতু ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক বছর আগেই জেরুজালেমকে ইসরাইলের হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন।
এদিকে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান করে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এর একটি বিশেষ লক্ষ্য রয়েছে। তা হল, এর মাধ্যম ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিবাদ মিটিয়ে শান্তি অর্জনে সহায়তা করা। আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে একটি বার্তা দিতে চাই। সেটি হল, এটি এমন একটি বাস্তব সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আশা করা যায়। নরওয়ের বিদেশমন্ত্রী এসপেন বারথেড বলেছেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নরওয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী উকিল। আজ নরওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি উভয় দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। ২২ মে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সান্তেজ এবং আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অর্জনের জন্য একটি ‘প্রয়োজনীয়’ পদক্ষেপ বলে মনে করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সান্তেজ। তিনি বলেন, আমরা সবাই শান্তি করতে চাই। তার জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অপরিহার্য প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, পূর্ব জেরুসালেম হবে এই রাষ্ট্রের রাজধানী। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য স্লোভেনিয়া ও মাল্টা ইঙ্গিত দিয়েছে, তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।