মীযান ডেস্ক: কথায় বলে প্রত্যেক সাফল্যের কারিগর নেপথ্যেই থেকে যান। তার বা তাদের তিমির বদলায় না। এর জ্বলন্ত উদাহরণ চন্দ্রযানের লঞ্চপ্যাড নির্মাতা দীপক কুমার উপরারিয়া। ঝাড়খণ্ডের রাঁচির এই ভদ্রলোকের অসামান্য অবদান ছিল চন্দ্রযান-৩ এর নেপথ্যে। ভারত হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের এই কর্মী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করেছিলেন চন্দ্রযানের ফোল্ডিং প্ল্যাটফর্ম এবং স্লাইডিং দরজা তথা লঞ্চপ্যাড। গত ২৩ অগাস্ট চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করে নয়া ইতিহাস তৈরি করেছে ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান ও গবেষণা সংস্থা ইসরো।আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে এই অভিযানকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু সেই সাফল্যের গর্বে দেশবাসীর বুক ৫৬ ইঞ্চি চওড়া হলেও প্রদীপের নিচেই অন্ধকার হয়ে দেখা দিয়েছেন দীপক কুমার উপারিয়া। একসময় তিনি ছিলেন বিশ্বকর্মা, আজ তিনি রাস্তার ইডলি বিক্রেতা। ইসরোর ২৮০০ কর্মী, অফিসার ও বিজ্ঞানীর মতোই টানা ১৮ মাস বেতন মেলেনি দীপকের। তাই সংসার চালাতে এই দেড় বছরে দু-লক্ষ টাকা লোন নিতে হয়েছে। কিন্তু শোধ করবেন কীভাবে? শেষ পর্যন্ত রাঁচির রাস্তায় এখন ঠেলাগাড়িতে ইডলি-ধোসা বিক্রি করেন। প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগে এবং অফিস থেকে ফিরে কয়েক ঘণ্টা এই ব্যবসা করেন তিনি। এটাই তাঁর নতুন পেশা বা পার্ট টাইম জব। রাঁচির হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (এইচইসি) মেশিনিস্ট দীপক কুমারের পেট ভরাতে পারেনি চন্দ্রযানের সাফল্য কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ‘শুকনো’ শুভেচ্ছাবার্তা। তাই ঝাড়খণ্ডের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ইডলি ধোসা বিক্রি করতে হচ্ছে। ঠেলাগাড়ির সামনে ঝোলানো কার্ডবোর্ড – ইডলি ১৫ টাকা প্লেট। সঙ্গে রেখেছেন চায়ের বন্দোবস্তও। হকের প্রাপ্য বেতন না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলে আপাতত হাসিমুখেই হকারি করছেন দীপকবাবু। আকাশচুম্বি সংস্থা ইসরোর কর্মচারী হয়েও অভাবের তাড়নায় নিজেদের পেট ভরাতে অন্যের পেট ভরানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তবে ইসরোর চাকরিটা এখনও ছাড়েননি। রাঁচির ধুরওয়া এলাকার পুরনো বিধানসভা ভবনের উল্টোদিকে তাঁর ঠেলা-দোকানের ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। একইসঙ্গে বেআব্রু মোদি সরকারের প্রচার সর্বস্বতাও। বিজেপির আইটি সেলের মুখে ঝামা ঘষে রোজ দুবেলা ইডলি বিক্রি করছেন ইসরোর লঞ্চপ্যাড নির্মাতা দীপক কুমার উপরারিয়া। অথচ দিনরাত পরিশ্রম করে এদেরই মেহনতের ফসল চন্দ্রযান, সূর্য অভিযানের সাফল্য কেড়ে নিয়েছে রাজনীতি। বিজ্ঞান এখন কপর্দকশূন্য হয়ে খালি পেটে রাস্তার ধারে হকারি করছে। কারণ, রাস্তা কারো একার নয়।