মীযান ডেস্ক: জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি বা আমীরে জামাআত সাইয়েদ সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনী বলেছেন, ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেওয়াটা দেশের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে। গাজায় চলমান ইজরায়েলি যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জামাআতের মারকাযে রুটিন সাপ্তাহিক প্রোগ্রামে তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন হল সাধারণ মানুষকে এই ইস্যুতে সচেতন করতে হবে। যদিও গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজ্যে ও প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ বা সভা-সমিতি, মিছিল ইত্যাদি হলে সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মর্মে আমীরে জামাআত বলেন, সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ করতে পারে, কোথাও কোথাও করছেও। কিন্তু গাজাবাসী তথা ফিলিস্তিনিদের সমস্যা ও সংকট বিষয়ে মানুষকে সঠিক তথ্য জানানো দরকার। মিডিয়ার একাংশ ভুলভাল বা একপেশে তথ্য তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তাই আমাদের দায়িত্ব হল দেশবাসীর সামনে প্রকৃত তথ্য পেশ করা।
তিনি আরও বলেন, গাজায় একতরফা যুদ্ধ নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুয়ো তথ্য পরিবেশন করে মূল্যবোধের অবমাননা করছে একশ্রেণির মিডিয়া। কিন্তু তারা এটা বলছে না যে, বিগত সাড়ে সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ, ভূখণ্ড জবরদখল, অবৈধ বসতি স্থাপন, আগ্রাসন, সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। বিশ্বের সবথেকে মজলুম জাতি ফিলিস্তিনিরা। অথচ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টানদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ইহুদিদের জীবন যখন ওষ্ঠাগত হচ্চিল, তখন এই ফিলিস্তিনরাই ইহুদিদের আশ্রয় দিয়েছিল। তখন ইহুদিরা শরণার্থী হিসেবে ফিলিস্তিনে এসেছিল। এখন তারাই মূলনিবাসীদেরকে তাদের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করে ফিলিস্তিনিদেরকে শরণার্থীতে পরিণত করেছে। গাজা উপত্যকা এখন বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে সর্বজনবিদিত। এসবের জন্য দায়ী ইহুদিদের নিষ্ঠুর, নির্মম ও বর্বরোচিত আচরণ। এসব সত্য সাধারণ মানুষকে জানানো আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। মিডিয়া এসবকে ধামাচাপা দিয়ে হামাসকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখাচ্ছে। বিশ্বে যত রকমের অসভ্যতা, নোংরামি ও পাশবিকতার আমদানি করেছে ইহুদিরাই।
আমীরে জামাআত আরও বলেন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মূল্যবোধ, নৈতিকতার মতো বর্তমান বিশ্বে যা কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসবের পরিপন্থী কর্মকাণ্ড চালায় এই ইজরায়েল বা ইহুদিরা। সমস্ত রকমের আন্তর্জাতিক আইন তারা লঙ্ঘন করে থাকে। এভাবেই তারা যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর অকথ্য ও অবর্ণনীয় জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। নির্দিধায় যত রকমের অমানবিকতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁর মতে, ফিলিস্তিনের সমস্যা কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের একটা দেশের সমস্যা নয়, এটা কেবল একটা জাতির সমস্যা নয়, এসব সমগ্র মানবতার সমস্যা ও বিশ্ব মানবতার লজ্জা। পশ্চিমাদের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ থেকেও তারা শিক্ষা নেয়নি। তাই ফিলিস্তিনকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে এবং গাজা উপত্যকাকে একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে ইজরায়েল।
গাজাবাসীর দুর্দশা প্রসঙ্গে হুসায়েনী সাহেব বলেন, ফিলিস্তিনে ৬০ লক্ষ মানুষ বিগত সাড়ে সাত দশক যাবত নিজভূমে পরবাসীর জীবন কাটাচ্ছে। তাদেরকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করে কার্যত শরণার্থী ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে ইজরায়েলীরা। বাকিরা ঘিঞ্জি ঘেটো এলাকায় কোনরকমে বেঁচেবর্তে আছে। গোটা দেশটাই একরকম উন্মুক্ত জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ইজরায়েলী হামলা ও যায়নবাদীদের আক্রমণে প্রায় প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের প্রাণ যায়। শুধু জনবসতিই নয়, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সর্বত্র বোমা হামলা হয়। প্রতি বছর কয়েক শত ফিলিস্তিনি মহিলা বিধবা হন, কয়েকশত শিশু ইয়াতিম হয়। বিনা অপরাধে বিনা বিচারে বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের কারাগারের অন্ধ কুঠুরিতে নিক্ষেপ করে রেখেছে ইজরায়েল। দীর্ঘ সাড়ে সাত দশক ধরে এহেন পাশবিকতা ও বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। হোসায়েনীর প্ৰশ্ন, এতকিছু দেখেও কেন নির্বিকার আন্তর্জাতিক মহল? তাই বিশ্বের সবথেকে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সমর্থন জানানো আমাদের জাতীয় স্বার্থ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও বলেন, ব্রিটিশ আমলে আমাদের দেশবাসীও একইভাবে ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা অত্যাচারিত হত। তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বিবেকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদেরও নৈতিক দায়িত্ব হল ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেওয়া। তাঁর কথায়, ফিলিস্তিনরা মোটেই জঙ্গি নয়। তারাও আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো দেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
