বিলকিস বানো গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে ১১ সাজাপ্রাপ্তকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, মুখ পুড়ল গুজরাট সরকারের

মীযান ডেস্ক: বিলকিস বানোকাণ্ডে অপরাধীরা কেন জেলের বাইরে? তাদের ঠিকানা হওয়া উচিত জেলখানাতেই। এভাবেই গুজরাট সরকার তথা বিজেপি দলকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও পরিবারের সদস্যদের হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি দেওয়াটা বেআইনি। শীর্ষ আদালতের সঙ্গে জালিয়াতি করেছিল সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। তাদের বেআইনি কাজে হাত মেলায় গুজরাতের বিজেপি সরকারও। গুজরাতের ডাবল ইঞ্জিন সরকার ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছে। সোমবার সরাসরি একথা জানিয়ে বিলকিস বানো মামলায় ধর্ষক-হত্যাকারীদের আগাম মুক্তির সরকারি সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নারীর অধিকার, নারী সম্মান, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নিয়ে অনেক বক্তব্য দিলেও সেইদিনই বিকেলের দিকে গুজরাট সরকার বিলকিস-সহ তার মা এবং পরিবারের আরও তিন মহিলাকে ধর্ষণ ও ৭ জনের হত্যাকারী ১১জন অপরাধীকে জেল থেকে মুক্ত করে দেয়। যা নিয়ে দেশ তোলপাড় হলে বিজেপি তথা গুজরাট সরকার নানারকম যুক্তি ও সাফাই দিতে থাকে। এমনকি জেল থেকে বের করার পর ১১জন অপরাধীর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে তাদেরকে সাদরে বরণ করে নেওয়া হয় স্থানীয় বিজেপি নেতাদের তরফে।

এদিকে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে ওই ১১ জন গণধর্ষণকারী ও হত্যাকারীকে। সোমবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। স্বভাবতই এই চপেটাঘাতের ধাক্কায় অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপির।২০০২ সালে গোধরা কাণ্ডের পর গুজরাতে ছড়িয়ে পড়েছিল একতরফা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। সেই সময়ই গণধর্ষণের শিকার হন ২১ বছরের বিলকিস। সেবছর ৩ মে গুজরাটের দাহোর জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস। তাঁর চোখের সামনেই শিশুকন্যাকে দেওয়ালে আছড়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরিবারের আরও ছ’জনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। উপর্যুপরি শারীরিক অত্যাচারে অচেতন হয়ে পড়েন বিলকিস। এক পর্যায়ে তাঁকে মৃত ভেবে চলে যায় ধর্ষক ও হত্যাকারীরা। তারপর থেকে তিনি সুবিচারের আশায় আদালতের দরজায় ঘুরছেন। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। এপর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছিলেন বিলকিস। কিন্তু স্বাধীনতার ‘অমৃতকালে’ গুজরাতের বিজেপি সরকারের একটা সিদ্ধান্তে আচমকাই ওলটপালট হয়ে যায় সব কিছু। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট, ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার।এদিকে এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইঞার বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, গুজরাত সরকারের কোনও অধিকারই নেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ওই সংক্রান্ত মামলার শুনানি যেহেতু মহারাষ্ট্রে হয়েছে, তাই সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দিতে পারে একমাত্র মহারাষ্ট্র সরকারই। এক্ষেত্রে এক সাজাপ্রাপ্ত রাধেশ্যাম শাহ আদালতের সঙ্গে জালিয়াতি করেছে বলেও দাবি বেঞ্চের। কারণ, গত বছর ১৩ মে তার আর্জির প্রেক্ষিতে গুজরাত সরকারকে ওই ১১ জনের সাজা মকুবের আবেদন বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই অনুযায়ী মেয়াদ শেষের আগেই সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দেয় বিজেপি সরকার। ছাড়পত্র নেওয়া হয় শীর্ষ আদালতেরও। অথচ আইন অনুযায়ী তা করা যায় না।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: