চন্দ্রযান-৩ সাফল্যের নেপথ্যে একঝাঁক মুসলিম বিজ্ঞানীর অবদান

সাইয়েদ খালেক আহমেদ

বুধবার সন্ধ্যায় নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ভারতীয় মহাকাশবিজ্ঞানীরা। এদিনই সন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করে চন্দ্রযান-৩। নেমেছে চাঁদের অন্ধকার দিকে। যা নিয়ে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর গর্বের সীমা পরিসীমা নেই। সত্যিই তো গর্বেরই বিষয়। সারা বিশ্বকে আজ তাক লাগিয়ে দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশবিজ্ঞানীদের এই আকাশচুম্বি সাফল্য। আর এই মহাজাগতিক সাফল্যের নেপথ্যে অন্যান্য অনেকের সঙ্গে রয়েছেন একঝাঁক মুসলিম বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এখানে উল্লেখ করা হল।

চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পিছনে যারা দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের অবদান কোনদিন ভোলার নয়। বর্তমানে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র অবস্থান আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরেই চতুর্থ। সুতরাং একথা বলাবাহুল্য যে, মহাকাশ জয়ের লক্ষ্যে ভারতও এখন বিশ্বগুরুর তালিকায় এসে গেছে। ইসরোর দ্বারা পরিচালিত এই চন্দ্রযান টিমে রয়েছেন সানা ফিরোজ, ইয়াসের আম্মার, মুহাম্মদ সাবির আলম, আরিব আহমাদ, আক্তেদার আব্বাস, ইশরাত জামাল, খুশবু মির্যা, মুহাম্মদ কাশিফ প্রমুখ। এদেরই সহযোগী হিসেবে পশ্চিমবাংলা থেকেও তিনজন মুসলিম বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার। সেই তিন বাঙালি মুসলিম হলেন রৌশন আলি, তৌসিকুল ওয়ারা, মোশারফ হোসেন। এছাড়াও যেসব বাঙালি এই টিমে ছিলেন তাঁরা হলেন সুজয় দলুই, অমর নন্দী, সৌমিক সরখেল, অনুরাগ পাত্র, প্রিয়াঙ্কা দাস সিংহ চৌধুরী, সানী মিত্র, অভিষেক সাহা, জয়ন্ত লাহা, রাজীব সাহা।

সানা ফিরোজ:
উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের মদন মোহন মালব্য ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বি.টেক করেন (২০০৬-২০১০) এই মুসলিম তরুণী। চন্দ্রযান-৩ টিমে ছিলেন মোট ৫৪জন মহিলা বিজ্ঞানী। তার মধ্যে অন্যতম সানা। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের মাউ এলাকায়। ২০১৩ সাল থেকে ইসরো-র সঙ্গে যুক্ত আছেন।

ইয়াসের আম্মার:
সানা ফিরোজের স্বামী ইয়াসের আম্মারও একই বছর একই প্রতিষ্ঠান থেকে একই বিভাগে বি.টেক করেন। ইয়াসের এর বাড়ি গোরখপুর অঞ্চলেই। ২০১০ সাল থেকে তিনি ইসরোয় নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁর লেখা অনেক মূল্যবান গবেষণাপত্র ইসরোর জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে।

মোহাম্মদ সাবির আলম:
মহাকাশ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন সাবির আলম। এই বিষয়ের ওপরেই বি.টেক করেন কেরলের তিরুবন্তপুরমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ইসরোয় কাজ করছেন।

আরিব আহমাদ:
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২০১৫-১৯ ব্যাচের বি.টেক করেন আরিব আহমাদ। উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার বাসিন্দা। চন্দ্রযান-৩ মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়ার আগে যারা শেষবারের মতো মহাকাশযানটিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন, সেই টিমে ইন্সপেকশন অফিসার হিসেবে ছিলেন আরিব।

আক্তেদার আব্বাস:
উত্তর প্রদেশের গোন্ডা জেলার বাসিন্দা আক্তেদার আব্বাস। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬-২০১০ ব্যাচের বি.টেক। এরপর এলাহাবাদের মতিলাল নেহরু ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে এম.টেক করেন। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইসরোয় কাজ করছেন। ইসরোয় যোগ দেওয়ার আগে দেরাদুনের ডিআইটি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনে অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন।

ইশরাত জামাল:
আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক ইশরাত জামাল। এরপর কানপুর আইআইটি থেকে পাওয়ার অ্যান্ড কন্ট্রোল বিষয়ে এম.টেক করেন। ২০১৭ সাল থেকে ইসরোয় কর্মরত রয়েছেন।

খুশবু মির্যা:
আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক খুশবু মির্যা। এই মুসলিম তরুণীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের নয়ডাতে। বছর পাঁচেক তিনি ইসরোয় চাকরি পেয়েছেন।

মুহাম্মদ কাশিফ:
জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক করেছেন মুহাম্মদ কাশিফ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইসরোর ব্যাঙ্গালুরু শাখায় চাকরি পান। সেখানে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন তিনি।
তিন বাঙালি মুসলিমের পরিচয়:

রৌশন আলি:
উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহারের রামনগরে বাড়ি। মালদহ পলিটেকনিক কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং পরে বি.টেক করেন। ইসরোর চন্দ্রযান-৩ অভিযানে তাপমাত্রা নিরীক্ষণের কাজে যুক্ত ছিলেন।

তৌসিকুল ওয়ারা:
বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার চাঁদপুরের মহব্বতপুর গ্রামে। কলকাতার রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে এম.টেক করেন। ইসরোর কৃত্রিম উপগ্রহের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে চন্দ্রযান-৩ টিমে কাজ করেছেন।

মোশারফ হোসেন:
বীরভূম জেলার বিলাসপুরের বাসিন্দা। শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি করেছেন। এরপর দিল্লি আইআইটি থেকে এম.টেক এবং পিএইচডি করেন। ইসরোরর দ্বারা পরিচালিত চন্দ্রযান-৩ বিক্রম  ল্যান্ডারের কয়েকটি পে-লোড এর দায়িত্বে ছিলেন।

Share :

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: