মীযান ডেস্ক: আজ শনিবার ২৫ নভেম্বর রাজস্থানে বিধানসভা ভোট হয়ে গেল। ২০০ আসনেই এদিন ভোট হয়। এবারও মরুরাজ্যের ভোট প্রচারে বিজেপি নেতারা সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণ করেন এবং হিন্দুত্ববাদ ও বিভাজন-মেরুকরণকেই এবারও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে দুটি স্বদেশী মানবাধিকার সংস্থা সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস বা সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচ।
২০১৮ সালের ভোটে ১০০ আসন পেয়ে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস, কিন্তু প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের তফাত ছিল সামান্যই। কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৯.৩০ শতাংশ, আর বিজেপি ৩৮.৮ শতাংশ। কেরলের মতোই রাজস্থানেও সাধারণত একই সরকার পরপর দু-বার ক্ষমতায় আসে না। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে, এবার বিজেপির পাল্লা ভারী। যদিও কেরলের ৫ বছর অন্তর পালাবদলের মিথ এবার ভেঙে দিয়ে পরপর দ্বিতীয় ক্ষমতায় ফিরেছে সিপিআইএম। সুতরাং কংগ্রেসের গেহলট-পাইলট জুটি এবারও রাজস্থান ফিরে পেতে পারে। শেষবার ১৯৮৫ সালে কংগ্রেস পরপর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেছিল।
সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, যাবতীয় নিয়ম ও নির্বাচনী বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে বিজেপি নেতারা ক্রমাগত সংখ্যালঘু সমাজকে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণ কতভাবে এবং কীভাবে করা হয়েছে, তার একটা খসড়া তৈরি করেছে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা দুটি। সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করতে দেশে যেসব সংস্থা ও সংগঠন কাজ করে, তার মধ্যে অন্যতম হল সিজেপি। সিজেপি প্রাথমিকভাবে এই তথ্য সংকলন করেছে। তার ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সামাজিক মাধ্যম এক্সে তুলে ধরেছে হিন্দুত্ব ওয়াচ নামের একটি সংস্থা, যারা ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষী ভাষণ নথিবদ্ধ করে।
এবার ২০০ আসনের রাজস্থানে সব দলের মিলিয়ে মোট প্রার্থী ছিলেন ১৮৬২ জন। মোট ভোটার সোয়া ৫ কোটি। আগের তিন দফায় মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং মিজোরামে ভোট হয়ে গেছে। শেষ পর্বে তেলেঙ্গানা রাজ্যে বিধানসভা ভোট হবে ৩০ নভেম্বর। পাঁচ রাজ্যের ফল একসঙ্গে প্রকাশ হবে ৩ ডিসেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের ফলাফল মাস ছয়েক পর হতে চলা লোকসভা নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের মতোই রাজস্থান দখলেও চেষ্টার কসুর রাখেনি বিজেপি। আজ শনিবার ভোটের দিনেই মুখ্যমন্ত্রী-পুত্র বৈভব গেহলটকে তলব করেছিল ইডি। বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘন মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছেন, রাজস্থানে জিতলেই অযোধ্যায় নিয়ে গিয়ে হবে রামলালা দর্শন। মরিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১২টি সভা ও রোড শো করেছিলেন। এবার করেছেন দ্বিগুণেরও বেশি, ২৬টা। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৬৫টি প্রচার সমাবেশে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী গেহলট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনমুখী কংগ্রেস সরকারের কাছে এমনিতেই ব্যাকফুটে বিজেপি। তবে মুখ্যমন্ত্রী গেহলট বনাম তরুণতুর্কি উপমুখ্যমন্ত্রী পাইলটের দ্বন্দ্ব কংগ্রেসের সবথেক বড় মাইনাস পয়েন্ট। শোনা যাচ্ছে এবার পাইলটকেই চালকের আসনে বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু সম্প্রতি ফারুক আব্দুল্লার কন্যা সারাহ-র সঙ্গে পাইলটের বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টা কংগ্রেসকে ভাবাচ্ছে বৈকি।