বক্তব্যে নেই দম্ভ-আস্ফালন, উত্তরসূরীর চিন্তায় মোদি, বাংলায় প্রচারে নরম সুর কি বিদায়ের লক্ষ্মণ? উঠছে প্রশ্ন

মীযান ডেস্ক: প্রথম তিনদফায় ভোট প্রচারে বিভিন্ন রাজ্যে সভা সমাবেশে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে যেমন ঝাঁজ, দম্ভ, অহমিকা, আস্ফালন শোনা যাচ্ছিল, চতুর্থদফা সেই চেনা ছক যেন মিইয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হারার আগেই কি তবে হেরে বসলেন মোদি? এই দফায় নরম সুর কি তবে বিদায়ের লক্ষ্মণ? রবিবার চতুর্থ দফা ভোটের মুখে পশ্চিমবাংলায় প্রচারে এসে বিস্ময়করভাবে যেন কাকুতি মিনতির সুরে ভোটভিক্ষা করলেন মোদি। দম্ভ নয়, আমিত্বও নয়। বরং জনতার কাছে তাঁর কাতর আর্জি, ‘ভোটটা আমাকে দিন।’ গ্যারান্টি তাঁর চলতি ভোটের স্লোগান। তাই সেটাও দিলেন তিনি। তবে চাকরির নয়, উন্নয়নের নয়। বরং চিরাচরিত ধর্ম ও সংরক্ষণের। যদিও সেই গ্যারান্টি ছাপিয়ে গেল উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ টেনে ভোটভিক্ষার কাতরতা। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলল, তিন দফার ভোটের শেষেই কি মোদি তথা বিজেপির বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছে?

রবিবার রাজ্যে চারটি সভা করেন ভাটপাড়া, চুঁচুড়া, পুরশুড়া এবং সাঁকরাইলে। চুঁচুড়ায় তিনি আচমকাই বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের পরম্পরা…পরিবারের বড়রা উত্তরসূরির জন্য কিছু করে যেতে চান, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর পরিবার ভালে থাকে। এটা পরিবারের কর্তার ইচ্ছা, দায়িত্বও। কিন্তু মোদির উত্তরাধিকারী কে? মোদির পরিবার কে? আমার দেশবাসী। পরিবারের কর্তা হয়ে আপনাদের জন্য মজবুত ও বিকশিত ভারত রেখে যেতে চাই।’ এতেই প্রশ্ন উঠছে, ব্যাটন বদল কি তাহলে সত্যিই সময়ের অপেক্ষা? তবে কি বিদায় নিশ্চিত বুঝে গেছেন মোদি? শনিবারই অরবিন্দ কেজরিওয়াল তোপ দাগেন, ‘নরেন্দ্র মোদি এক বছরের প্রধানমন্ত্রী। ৭৫ বছর বয়স হলেই তাঁকে বিজেপির সিদ্ধান্ত মতো পদ থেকে সরে যেতে হবে। আর তখন অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাহলে আপনারা মোদিকে ভোট দেবেন না, আসলে দেবেন অমিত শাহের জন্য।’ কেউ কেউ আবার বলছেন, বিদায় নিলে আদবানী, যোশিদের মতোই মোদিকেও মার্গ দর্শক বানিয়ে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এই প্রচার সামাল দিতে অমিত শাহ বলেছেন, ‘মোদিজিই আমাদের নেতা।’ বিরোধীদের প্রশ্ন, তারপরও নরেন্দ্র মোদি উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে বিষন্ন কেন? তাই ধর্মীয় বিভাজন, সংখ্যালঘু ইস্যু, সংরক্ষণ বা সন্দেশখালি প্রসঙ্গে তৃণমূলকে আক্রমণ… সবই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি এদিন রাজ্যবাসীর জন্য পাঁচ গ্যারান্টি দিয়েছেন: ১) মোদি যতদিন আছে, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ হবে না। ২) এসসি, এসটি, ওবিসিদের সংরক্ষণ কেউ তুলে দিতে পারবে না। ৩) রামনবমী কিংবা রামের পুজো করতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। ৪) রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ফয়সালাকে কেউ পাল্টাতে পারবে না। ৫) সিএএ কেউ আটকাতে পারবে না। অর্থাৎ, সব গ্যারান্টির মধ্যেই রয়ে গিয়েছে ধর্ম ও মেরুকরণ। পাঁচ বছর আগেও ভোটের দাবির সময় মোদি বলেছিলেন, রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করবেন। সেই কার্ডে অবশ্য রামমন্দির ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই নেই। তাই ধর্ম কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের গ্যারান্টিতেই যেতে হয়েছে তাঁকে। একদিকে তিনি বলেছেন, বাংলায় তৃণমূল রামনবমী পালন করতে দেয় না। বাংলায় হিন্দুদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রেখেছে মমতার সরকার। আর তাঁরই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রামনবমীর ছুটি ও উচ্ছ্বাসের প্রসঙ্গ টেনেছেন।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: