বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতের অন্তর্নিহিত শক্তি, মোদির রাজত্বে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটাই অপমানজনক: সোনিয়া গান্ধী

মীযান ডেস্ক: কয়েকমাস আগে নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধনের দিন সাংসদদের হাতে নতুন সংবিধানের যে প্রতিলিপ তুলে দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার, সেখানে দেখা যায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক হইচই হয়েছিল। তারপর একের পর এক নিত্য নতুন ইস্যু সামনে আসায় বিষয়টি থিতিয়ে যায়। কিন্তু কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষনেত্রী সোনিয়া গান্ধী এদিন ধর্মনিরপেক্ষতা ইস্যুতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে তুলোধনা করে বললেন, বর্তমানে দেশের ক্ষমতাসীনদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দই নিন্দনীয় হয়ে উঠেছে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। এভাবেই কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ করলেন সোনিয়া।

সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে কংগ্রেস নেত্রী ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে লিখেছেন, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই দু’টি বিষয় হল একটি ট্র্যাকে থাকা দু’টি রেললাইনের মতো। যা সরকারকে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আদর্শ সমাজ গঠনের দিকে পরিচালিত করে। মোদি সরকারের কার্যকলাপে উদ্বেগ প্রকাশ করে সোনিয়া আরও লিখেছেন, ‘কেন্দ্র সরকার গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা বলে। কিন্তু, একই সঙ্গে গণতন্ত্রের সুরক্ষা কবচগুলিকে দুর্বল ও পঙ্গু করে দেয়। ফলে সমাজে মেরুকরণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কংগ্রেস নেত্রীর মতে, ‘আমরা সকলেই গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দগুলির সঙ্গে পরিচিত। যদিও এগুলির প্রকৃত অর্থ বাস্তবে কার্যত অধরাই থেকে যায়।’ এ প্রসঙ্গে সোনিয়া উল্লেখ করেছেন মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, বি.আর আম্বেদকরের নাম। তিনি বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা নানাভাবেই দেওয়া যায়। কিন্তু, মহাত্মা গান্ধীর ‘সর্ব ধর্ম সম ভাব’-ই বোধহয় এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। গান্ধীজি সব ধর্মের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের অপরিহার্যতার দিকটি উপলব্ধি করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু ভারতকে বহু ধর্মের পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। তাই, তিনি সব সময় চেষ্টা করেছেন ভারত যাতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ডাঃ বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে সংবিধান প্রণেতারা এই বিষয়টির উপরই জোর দিয়েছিলেন।’
সোনিয়ার কথায়, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতের অন্তর্নিহিত শক্তি। ওই লেখায় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটেই দেশে সরকার গঠন হয়। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক একমত হলেই কি বাকিদের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায়? এমনটা হলে তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: