দেশের একটি রাজ্য হরিয়ানায় যেভাবে হিন্দুত্ববাদী ব্রিগেড সংখ্যালঘু মুসলিমদের বসতবাড়ি, ধর্মস্থান ও সম্পত্তিতে হামলা করেছে, তাতে আশঙ্কা জাগছে যে, ভারতে সংখ্যালঘুরা আত্ম-সম্মানের সঙ্গে বাস করতে পারবে কি-না।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি জিএ সানধাওয়ালিয়া এবং বিচারপতি হরপ্রীত কাউর জীয়ান মারাত্মক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। মাননীয় দুই বিচারপতি যে শব্দ বন্ধনী ব্যবহার করেছেন তা অত্যন্ত ভীতি-বিহ্বলের বিষয়। ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা জাতিগত সাফাই অভিযান-এর মতো মারাত্মক বিষয়টিকে তাঁরা তুলে ধরেছেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যদি জাতিগত সাফাই অভিযানে সংঘ পরিবারের শাখা সংগঠনগুলি এভাবে উন্মত্ত আচরণ করতে থাকে, তাহলে হিন্দু রাষ্ট্র গঠন হয়ে গেলে মুসলিমরা কি এদেশে বসবাস করতে আদৌ পারবে?
হিন্দুত্ববাদীরা আক্রমণ করছে। সরকার বেআইনি ভাবে বুলডোজার দিয়ে মুসলমানদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে শুধু কোর্টই বলছে। অথচ বাস্তবে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস রাজনৈতিক দলগুলো করছে না। এটাও কম চিন্তার বিষয় নয়।
হরিয়ানা সরকার শক্তি প্রদর্শন করছে বলে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে। তাই নোটিশ জারি করেছেন মাননীয় বিচারপতিরা। একতরফা ভাবে আক্রমণ শানানো হয়েছে। মুসলিমদের সামাজিক বয়কট করা হচ্ছে। এসব দেখে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তাক্লিষ্ট মন এরকম ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে। এই ভারতে অতীতে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা কম জুলুম অত্যাচার করেনি। বৌদ্ধদের ওপর অমানুষিক নিপীড়ন ব্রাহ্মণ্যবাদীরা করেছিল। মৌর্য শাসনের পতনের পর যে ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয় তাতে বৌদ্ধদের উপর নির্মম অত্যাচার নেমে আসে। গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক তার নিকৃষ্ট উদাহরণ। কর্ণসুবর্ণ ছিল শশাঙ্কের রাজধানী। এই জালিম শাসক বৌদ্ধ সংহারে নেমে পড়েন।
ভারতবর্ষকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে হিন্দুরাষ্ট্র-এ নিয়ে যাবার পিছনে সংঘের ব্রাহ্মণ্যবাদী মস্তিষ্ক কাজ করছে। সংঘ চায় এই দেশে সংখ্যালঘুরা যেন কোন অধিকার ছাড়াই থাকে।
উল্লেখ্য, ভারতে মুসলমানদের ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যে অত্যাচারের খড়্গ নেমে এসেছে, এতে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম করা দরকার। দলিত-মুসলিম-শিখ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ করা হোক। আরো জনগোষ্ঠীকে এতে শামিল করা, যারা নিজেদের অত্যাচারিত মনে করছে। এই প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চ কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করা। আর সামাজিক সংহতি রক্ষায় একযোগে কাজ করা। ঐক্য-সংহতিই পারে অত্যাচারের মোকাবিলা করতে।