অভিশপ্ত ইহুদী জাতি সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কোথায়, কী বলেছেন?

তালহা হাসান

আসমানি ধর্মগুলোর মধ্যে ইহুদি ধর্ম সবথেকে পুরনো। সাধারণত ইহুদি বলতে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-এর অনুসারী বা উম্মতদের বোঝানো হয়। বনি ইসরাইল নামে পরিচিত এই সম্প্রদায় সে সময় আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হলেও পরবর্তীতে নিজেদের ধর্মগ্রন্থের বিকৃতি করে। পবিত্র কুরআনে ইহুদি জাতি প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা এসেছে। তাদের গুণাবলি, জীবনাচারসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ রয়েছে তাতে।

কুরআনের বর্ণনায় বনি ইসরাইল:

বনি ইসরাইলের পরিচয় : মহান আল্লাহ পৃথিবীতে জ্বিন ও মানুষের হিদায়াতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মানবজাতির পিতা হিসেবে পরিগণিত নবী ইবরাহিম (আ.)-কে ইরাকের বাবেল শহরে পাঠান। তিনি তাঁর স্ত্রী সারাহকে নিয়ে ফিলিস্তিনের আল-খলিল নগরীতে চলে যান। সেখানে তাঁর সন্তান ইসহাক (আ.)-এর জন্ম হয়। ইসহাক (আ.)-এর সন্তান ছিলেন ইয়াকুব (আ.)। ইয়াকুব (আ.)-এর আরেক নাম ছিল ইসরায়েল। আর তাঁর সন্তানদের বলা হত বনু ইসরাইল। পবিত্র কোরআনে ইহুদিদের বিভিন্ন দোষ ও গুণের কথা এসেছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হল —

১. শ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা : মহান আল্লাহ ইহুদি জাতিকে তাদের সময়ে শ্রেষ্ঠ জাতি করেছিলেন, তবে তাদের অপরাধপ্রবণতা, ঔদ্ধত্য আচরণ ও অহমিকার কারণে তারা বিরাগভাজন হয় এবং পৃথিবীর সবথেকে নিপীড়িত জাতিতে পরিণত হয়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘হে বনি ইসরাইল! আমার অনুগ্রহগুলো স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম এবং আমি তোমাদের সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ৪৭)

২. মুমিনদের প্রতি সব সময় বিদ্বেষী : বনি ইসরাইল মুমিনদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। পবিত্র কুরআনে মহানবী (সা.)-কে এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে: ‘আপনি মানুষের মধ্যে ইহুদি ও মুশরিকদের সবচেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন পাবেন, এবং যারা বলে, আমরা খ্রিস্টান, আপনি তাদের মুমিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখবেন…। (সূরা: আল মায়িদা, আয়াত: ৮২)

৩. কপটতা ও অর্থলোভ : কুরআনে বনি ইসরাইলকে ধুরন্ধর ও অর্থলোভী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে: ‘আসলে তাদের অন্তরে আল্লাহর থেকে তোমাদের ভয়-ই বেশি। কারণ, তারা অবুঝ সম্প্রদায়।’ (সূরা: হাশর, আয়াত: ১৩)

৪. বিশ্বাসঘাতকতা : সব সময় বিশ্বাস ভঙ্গ করা বনি ইসরাইলের একটি মন্দ স্বভাব। তাই তাদের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘তারা যখনই অঙ্গীকার করেছে, তখনই তা ভঙ্গ করেছে; বরং তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০০)

৫. পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা : বনি ইসরাইল সুযোগ পেলেই বিশৃঙ্খলা বা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘তারা যতবার যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে, মহান আল্লাহ ততবার তা নিভিয়েছেন, তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করে বেড়ায়, আল্লাহ বিশৃঙ্খল ব্যক্তিদের ভালবাসেন না।’ (সূরা: আল মায়িদা, আয়াত: ৬৪)

৬. দীর্ঘায়ু লাভের আকাঙ্ক্ষা : ইহুদিদের মধ্যে অনন্তকাল বেঁচে থাকার বাসনা প্রবল। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘আপনি জীবনের প্রতি তাদেরকে সব মানুষের মধ্যে, এমনকি মুশরিকদের থেকেও বেশি লোভী পাবেন। তাদের সবাই আকাঙ্ক্ষা করে, যদি তাদের হাজার বছর আয়ু দেওয়া হত। কিন্তু দীর্ঘায়ু তাদের শাস্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে না, তারা যা করে আল্লাহ তার দ্রষ্টা।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ৯৬)

৭. আল্লাহকে দোষারোপ : পৃথিবীতে একমাত্র বনি ইসরাইল জাতি আল্লাহকে নানাভাবে গালমন্দ করেছে। কখনও তারা আল্লাহকে দরিদ্র বলে আখ্যায়িত করেছে। যেমন কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলে নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবগ্রস্ত এবং আমরা অভাবমুক্ত, তাদের কথা ও অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার বিষয়টি আমি লিখে রাখছি। আমি বলব, জ্বলন্ত আযাব ভোগ কোরো। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৮১)

৮. নিজেদের আল্লাহর সন্তান দাবি : ইহুদিরা নিজেদেরকে আল্লাহর সন্তান বলে দাবি করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তাহলে তিনি তোমাদের অপরাধের কারণে কেন শাস্তি দেবেন; বরং তোমরা মানুষ…।’ (সূরা: মায়িদা, আয়াত: ১৮)

৯. মানুষকে তাচ্ছিল্য করা : ইহুদিরা নিজেদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলে মনে করে এবং অন্যদের নিচু ও অচ্ছুত-অস্পৃশ্য মনে করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘কিতাবধারীদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যার কাছে বিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও ফেরত দেবে। আবার এমন লোকও আছে, যার কাছে এক দিনার রাখলেও তার পেছনে লেগে না থাকলে সে তা ফেরত দেবে না। এর কারণ তারা বলে, নিরক্ষরদের ওপর আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং তারা জেনেশুনে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে।’ (সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত: ৭৫)

১০. আল্লাহর অভিশাপ : বনি ইসরাইলের অপকর্মের কারণে মহান আল্লাহ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাদের চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিত করেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘আল্লাহ ও মানুষের প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা যেখানেই ছিল লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের ওপর আল্লাহ ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, তারা আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করত, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালঙ্ঘন করত।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১১২)

১১. বারবার শাস্তি : বনি ইসরাইলের লোকেরা যুগে যুগে আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। তারা জালিম শাসকের নিয়ন্ত্রণে থেকে লাঞ্ছনাকর জীবন যাপন করেছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘স্মরণ করুন ওই সময়ের কথা, যখন আপনার রব ঘোষণা করেন যে, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ওপর এমন লোক পাঠাবেন, যারা তাদের কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। আপনার রব শাস্তি দিতে তৎপর এবং তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা: আরাফ, আয়াত: ১৬৭)

১২. নবীদের হত্যা : বনি ইসরাইল জাতি বহু নবী-রাসূলকে হত্যা করেছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে এবং যারা ওই সব মানুষকে হত্যা করে, যারা ন্যায়বিচারের নির্দেশ দেয়, আপনি তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দিন।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ২১)

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: