ওবিসি ও মুসলিম মহিলাদের সংরক্ষণ নয় কেন? সবকা সাথ সবকা বিকাশ নীতির পরিপন্থী এই বিল: জামাআতে ইসলামী হিন্দ

মীযান ডেস্ক: জামাআতে ইসলামী হিন্দ এর তরফে বলা হয়েছে, মহিলাদের জন্য লোকসভা এবং বিধানসভায় সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে। কিন্তু একইসঙ্গে ওবিসি এবং মুসলিম মহিলাদের জন্যও এই সংরক্ষণ কাম্য। এক প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে জামাআতের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক সেলিম ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, গণতন্ত্রকে মজবুত করতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে সব সম্প্রদায় ও শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও এ দেশের সংসদ এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের হার খুবই হতাশাজনক। সেজন্য লোকসভা এবং বিধানসভায় মহিলাদের জন্য বরাদ্দ বা সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশি ছোট দেশগুলোর সংসদে ভারতের তুলনায় অনেক বেশি মহিলা প্রতিনিধি রয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে লোকসভায় সদ্য পাস হওয়া মহিলা সংরক্ষণ বিল প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এই পদক্ষেপ আরো অনেক আগে করা উচিত ছিল বলে মনে করে জামাআতে ইসলামী হিন্দ।

কিন্তু ভারতের মতো এক বিশাল জনসংখ্যার দেশে সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয়টা বিলের খসড়ায় সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। কারণ, খসড়ায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু মুসলিম মহিলাদের সংরক্ষণের বিষয়টা ঠাঁই পায়নি। যদিও তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি মহিলাদের সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মুসলিমদের একাংশ ওবিসি-র আওতায় পড়লেও তারা কোথাও কখনও এসসি-এসটির মধ্যে পড়ে না। এসসি-এসটিরা সকলেই অমুসলিম বা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের।

অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সাচার কমিটির রিপোর্ট (২০০৬), সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরবর্তীতে মূল্যায়ণ রিপোর্ট (২০১৪), এক্সপার্ট গ্রুপ ডাইভারসিটি ইনডেক্স (২০০৮), ইন্ডিয়া এক্সক্লুসন রিপোর্ট (২০১৩-১৪), জনগণনা এবং ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে (২০১১) এই সমস্ত রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে, ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিম মহিলারা আর্থ-সামাজিক সূচকে অনেক পিছিয়ে আছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর এখনও অনেক ক্ষেত্রে তপশিলী জাতি-উপজাতিদের থেকেও মুসলিমরা অনগ্রসর রয়ে গেছে। লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা, বিধান পরিষদ সর্বত্রই মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। যা দেশে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাতে একেবারেই সামঞ্জস্যহীন। বর্তমানে পার্লামেন্টে বিজেপি দলের তরফে কোনও মুসলিম এমপি নেই।

জামাআতে ইসলামী হিন্দের মারকায থেকে কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেক্রেটারি কে.কে সোহেলের সই করা ওই প্রেস রিলিজে আরও বলা হয়েছে, পরবর্তী সেন্সাস রিপোর্ট প্রকাশ হলে তারপর বিধানসভা ও লোকসভা আসনের ডিলিমিটেশন বা পুনর্বিন্যাসের পর মহিলা সংরক্ষণ বিধি কার্যকর হবে। অর্থাৎ এই বিল লোকসভায় পাশ হলেও কার্যকর হতে ২০৩০ সাল লেগে যাবে। অর্থাৎ আসন্ন ২০২৪ লোকসভা ভোটে তো হবেই না, এরপরের লোকসভা ভোট হবে ২০২৯ সালে। তখনও মহিলারা আদৌ সংরক্ষণের সুবিধা পাবে বলে মনে হয় না। তার মানে লোকসভা ও বিধানসভাগুলোতে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ হবে ২০৩৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে। যাই হোক, এই বিলে ওবিসি এবং মুসলিম মহিলাদের কোনও সংরক্ষণ না দেওয়াকে অন্যায় বলে অভিহিত করেছে জামাআত। দেশের সবথেকে ইন্টেলেকচুয়াল মুসলিম সংগঠন বলে পরিচিত জামাআতে ইসলামী হিন্দের মতে, কেন্দ্র সরকারের সবকা সাথ সবকা বিকাশ নীতির পরিপন্থী এই বিল।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: