মহিলা সংরক্ষণ বিল আদতে ভোটের গিমিক ছাড়া কিছু নয়, অভিযোগ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের

মীযান ডেস্ক: মহিলা সংরক্ষণ বিল আদতে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন এবং পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের চমক বা গিমিক ছাড়া কিছু নয়। এমনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশের বিরোধী দলগুলো। তাদের মতে, এই বিল পাস আসন্ন ভোটে নরেন্দ্র মোদি সরকারেজন্য মোক্ষম একটি তাস হতে চলেছে। তবে এই তাস গেম চেঞ্জার হতে পারবে না। কারণ, আগে থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে আচমকা মঙ্গলবার সাতসকালে ঢাকঢোল পিটিয়ে লোকসভায় বিলটি পাস হলেও মহিলা সংরক্ষণ কার্যকর হতে আরও প্রায় বছর ছয়-সাতেক লেগে যাবে।

কারণ, প্রথম ধাপ অর্থাৎ সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সই পর্ব না হয় দ্রুতই মিটে যাবে। দ্বিতীয় ধাপে রুলস তৈরি এবং বিজ্ঞপ্তি জারির পর কার্যকর হয়ে যাবে আইনও। কিন্তু তারপর? দীর্ঘ অপেক্ষা। লোকসভা এবং বিধানসভা আসন ডিলিমিটেশন বা পুনর্বিন্যাসের পরই মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ সম্ভব। ডিলিমিটেশন হবে ২০২৬ সালে। আসন পুনর্বিন্যাস হয় জনগণনাভিত্তিতে২০২১ সালে যে জণগণনা করার কথা ছিল, আজও তা করে উঠতে পারেনি মোদি সরকার। ২০২৪ সালেও পারবে না। সুতরাং লোকসভা ভোটের আগে চটকদারি ঘোষণা শোনালেও ২০২৪ সালের ভোটে মহিলা সংরক্ষণ হবে না।
সুতরাং এটা ভোটের গিমিক বা গেম প্ল্যান ছাড়া কিছু নয়। নামেই লোকসভা ও বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি। আদপে এখন কিছুই হচ্ছে নাসবটা নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজি। কিন্তু এই বিলের গুরুত্ব এমনই যে, অধিকাংশ বিরোধী দলই একে সমর্থন দেবে। অর্থাৎ মহিলা সংরক্ষণ বিল উভয়কক্ষেই পাশ হতে চলেছে। কিন্তু ছ
বছর সময়সীমা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বছর পর আসবে ২০২৯ সাল। আরও একটি লোকসভা ভোটের বছর। এই বিলে আর একটি প্যাঁচ হল খসড়ায় বলা হচ্ছে, আইনে পরিণত হওয়ার ১৫ বছর পর মহিলা সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হবে। সুতরাং ২০২৯ সালের পর হাতে থাকবে মাত্র ৯ বছর। অর্থাৎ, ফের নতুন করে আইন না করলে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা বেশিদিন টেকসই হবে না।
এই সংক্রান্ত বিলের প্রথম সূচনা হয়েছিল রাজীব গান্ধীর আমলে, ১৯৮৯ সালে। রাজীবের চেষ্টা ছিল, প্রাথমিকভাবে পঞ্চায়েত ও পুরভোটে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ। তা তিনি পাশ করাতে পারেননি। কিন্তু নরসিমা রাওয়ের আমলে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ আইন পাশ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে দেবগৌড়ার আমলে হয়েছিল লোকসভা ও বিধানসভায় মহিলা আসন সংরক্ষণ। তারপর থেকে দফায় দফায় প্রতিটি সরকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে পারেনি। শেষবার ২০১০ সালে রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হয়। তবে আটকে যায় লোকসভায়। এবারও বিল আনা হল। তবে পুরনোটাই নতুন মোড়কে। লক্ষ্য, সংস্কার ও নয়া ইতিহাস রচনা! যা নরেন্দ্র মোদির প্রিয় সাবজেক্ট! পুরনো প্রকল্পের নতুন নাম। ২৭ বছর ধরে ছিল
মহিলা সংরক্ষণ বিল। নাম বদলে এবার হল, নারীশক্তি বন্দন অভিনিয়ম ২০২৩! অর্থাৎ মোদির নতুন ভারতে হিন্দির জয়যাত্রা।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: